Friday 2 January 2015

গল্প মোবাইল ভার্শন) : ক্রিকেটার (শিশির বিশ্বাস)


ক্রিকেটার

শিশির বিশ্বাস

স্কুলের ছুটিতে শেষপর্যন্ত ঠিক হল, সমু দেউলহাটিতে দাদু আর ঠাকুমার কাছেই বেড়াতে যাবে। অথচ কথা ছিল অন্যরকম। আগে অন্য স্কুলে পড়ত। গত দুবছর হল বাবা ওকে নিয়ে এসেছেন আন্ধেরির মারাঠা অ্যাকাদেমিতে। কারণ একটাই, মারাঠা অ্যাকাদেমিতে ভালো কোচের তত্ত্বাবধানে ছেলেদের ক্রিকেট শেখাবার ব্যবস্থা রয়েছে। আর এবারের ছুটিতে  স্কুল থেকে পুনেতে দুসপ্তাহের এক স্পেশাল ক্যাম্পের ব্যবস্থা হয়েছে। অতীতের নামি দুজন ক্রিকেট তারকা থাকবেন। এমন সুযোগ সহজে মেলে না। সমুর বাবা অভিজিৎ চৌধুরীর খুব আগ্রহ ছিল। কিন্তু বেঁকে দাঁড়াল সমু নিজেই। ছুটিতে দেউলহাটিতেই যাবে সে, অনেকদিন দাদু আর ঠাকুমার কাছে যায়নি।
বাবা তাই আর আপত্তি করেননি। কিন্তু ব্যাপারটা যে তা নয়, সেটা সমুর চাইতে ভালো কেউ জানে না। আসলে ক্রিকেটে তেমন উৎসাহ পায় না ও। বাবা একসময় ভালো ক্রিকেট খেলতেন। এ ব্যাপারে ছেলের জন্য তাঁর নজর গোড়া থেকেই। কিন্তু সমুর মোটেই আগ্রহ নেই ওতে। তবুও বাবার ইচ্ছেয় সপ্তায় দুদিন কিটসব্যাগ নিয়ে স্কুলের কোচিং মাঠে হাজিরা দিতেই হয়। এবার ছুটিতে পুনেতে পুরো দুসপ্তার কোচিং ক্যাম্পে যাবার কথা উঠতেই আর স্থির থাকতে পারেনি। দাদু আর ঠাকুরমাকে দেখতে যাবার নামে সোজা চলে এসেছে দেউলহাটিতে।
কিন্তু সেখানেও যে সেই ক্রিকেট থাবা গেড়ে রয়েছে, ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি। বুঝল দিন দুয়েকের মধ্যেই। সমুর দাদু মৃগাঙ্কমোহন চৌধুরী দেউলহাটির পুরনো মানুষ। অনেকটা জায়গা নিয়ে বাড়ি। অথচ মানুষ বলতে শুধু দাদু আর ঠাকুরমা। চমৎকার নিরিবিলি পরিবেশ। সমুর একেবারে মনমতো। কিন্তু সে সুখ কপালে সইল না। হঠাৎ এক বিকেলে কলকাতা থেকে খুড়তুতো ভাই অর্ক এসে হাজির। ছুটি পেলে অর্ক মাঝেমধ্যেই চলে আসে দেউলহাটিতে দাদু-ঠাকুরমার কাছে। স্বভাবে সমুর একেবারেই উল্টো। হই-হুল্লোড়ে মেতে থাকতে দারুণ পছন্দ করে। সেই অর্ক বাড়িতে পা দিয়ে সমুকে দেখেই তো অবাক। খানিক হাঁ করে তাকিয়ে থেকে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে বোঁ করে এক রাউন্ড খেয়ে বলল, “আরে সমু, তুই! নেতাজী বয়েজের তাহলে আর চিন্তা নেই রে এবার!
নেতাজী বয়েজ কী, কীসের চিন্তা, তখন আর ভাঙেনি অর্ক। সমুও জিজ্ঞেসা করেনি। দুই ভাইতে অনেকদিন পরে দেখা। নানা গল্পে সময় পার হয়ে গেছে।
পরের দিন সকাল হতেই নিরিবিলি বাড়িতে প্রায় চাঁদের হাট। দেউলহাটিতে দাদু-ঠাকুরমার কাছে অর্ক সময় পেলেই এসে বেড়িয়ে যায়। পাড়ায় ভালোই পরিচিতি। অর্ক এসেছে খবরটা চাউর হতে সকাল থেকেই বন্ধুরা আসতে শুরু করে দিয়েছে। একতলার মস্ত বৈঠকখানা সরগরম। আসলে অর্ক এলে বাড়িটা একটু অন্যরকম হয়ে ওঠে। দাদু আর ঠাকুরমাও খুশি হন। প্লেটভরতি ভালোমন্দ খাবার চলে আসে বৈঠকখানা ঘরে। আজও অন্যথা হয়নি। নানা কথার সঙ্গে সেগুলোর সদগতিও চলছে। আসর যখন বেশ জমে উঠেছে অর্ক তখনই বোমাটা ফাটাল। ফস করে গলা সপ্তমে তুলে বলল, “এবার তোদের আর চিন্তা নেই। জুপিটারের জাঁদরেল বোলার জগদীপ সিং কেমন ফিউজ হয়ে যায় দেখ!
কেন! কেন?” একসাথে হই হই করে উঠল সবাই।
উপস্থিত সবার মুখের উপর দিয়ে এক পলক চোখ বুলিয়ে নিয়ে অর্ক হাত রাখল পাশে সমুর কাঁধে। তারপর থেমে থেমে বলল, “এতক্ষণ পরিচয় করিয়ে দিইনি। এ আমার জ্যেঠতুতো ভাই সমু। মুম্বাইয়ে থাকে। ওখানে রমাকান্ত আচরেকরের কাছে কোচিং নেয়। মুম্বাইয়ে কাঙ্গা লিগে জি ডিভিশনের টিম ফ্রেন্ডস স্পোটিংয়ের নিয়মিত ব্যাটসম্যান। তো বুঝতেই পারছিস, এমন একজন ক্রিকেটারের কাছে জগদীপ সিং-টিং কিচ্ছু নয়।
একগাদা মিথ্যে কথা অর্ক এমন সহজভাবে বলে গেল যে, প্রতিবাদ করার কোনও সুযোগই পেল না সমু। আর প্রতিবাদ করলেও যে কোনও ফল হত, এমন নয়। ততক্ষণে দারুণ বিস্ময়ে ঘরসুদ্ধ ছেলের দল হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছে ওর দিকে। যেন খোদ শচীন তেন্ডুলকরই সশরীরে সামনে হাজির। তারপরেই চারপাশ থেকে ছুটতে শুরু করল প্রশ্নের ঝাঁক আচরেকর এখনও হাতে ধরে শেখান কি না, শচীন তেন্ডুলকরের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না, কাঙ্গা লিগে এ-বছর সেঞ্চুরি কিংবা জুনিয়র মুম্বাই টিমে ডাক পেয়েছে কি না ইত্যাদি।
মুম্বাইয়ের ছেলে হলেও সমু বরাবরই একটু লাজুক গোছের। তাই এসব প্রশ্ন সামাল দেওয়া মোটেই সহজ ছিল না। কিন্তু ওকে কিছু করতে হল না। পাকা ব্যাটসম্যানের মতো অর্ক দারুণভাবে সেসব অফ নয়তো অনে সমানে ড্রাইভ করে গেল।
সকালের মজলিশ শেষ হতে প্রায় দুপুর। তাও দাদু-ঠাকুরমার তাগাদায়। সেই মজলিশ থেকে সমু যা বুঝল, তাতে তার অবস্থা সত্যিই খারাপ হবার জোগাড়। এর চাইতে পুনের কোচিং ক্যাম্প বরং ভালো ছিল। হতচ্ছাড়া অর্কটা এ কী ফ্যাসাদে ফেলল তাকে!
দেউলহাটির নেতাজী বয়েজ ক্লাবের নামডাক আছে ক্রিকেট খেলায়। সামনেই তাদের এক ম্যাচ পড়েছে পাশের জুপিটার ক্লাবের সঙ্গে। জুপিটার কোনওবারই নেতাজী বয়েজের সঙ্গে পেরে উঠত না। কিন্তু গত বছর থেকে দান পাল্টে গেছে। জুপিটারে নতুন একজন ফার্স্ট বেলায় এসেছে, জগদীপ সিং। লম্বাচওড়া চেহারার পাঞ্জাবি ছেলে। দুর্দান্ত জোরে বল করে। তার উপর সিমটাও ব্যবহার করতে জানে। হুটহাট লাফিয়ে ওঠে বল। এমন বোলারকে কব্জা করা সহজ নয়। নেতাজী বয়েজের তাই এখন বড়ো দুর্দিন। গত বছর থেকে জুপিটারের সঙ্গে একটা ম্যাচেও সুবিধা করতে পারেনি। এবার একদিন বাদেই সেই ম্যাচ। আর তাতে সমুকেও নেওয়া হয়েছে টিমে। সবাই ধরেই নিয়েছে, জুপিটারের জগদীপ সিংয়ের জারিজুরি এবার খতম হবে সমুর হাতেই। চিন্তা নেই।
কপালে সেই থেকে গোটা কয়েক ভাঁজ পড়ে ছিল সমুর। বৈঠকখানার আসর ভাঙতে দাদু-ঠাকুরমার তাগাদায় ছুটতে হল স্নানের ঘরে। সময় পাওয়া গেল সেই খাওয়াদাওয়া সারা হবার পর। অর্ককে একা পেতেই বলল, “এটা কী হল, অর্ক?”
ভুরিভোজের পর অর্ক তখন ভাতঘুমের আয়োজন করছিল। চোখ নাচিয়ে বলল, “কী রে?”
সবার সামনে ওইভাবে একগাদা গুলপট্টি মেরে গেলি!
কী গুল!অর্ক আকাশ থেকে পড়ল।
ওই আচরেকরের অ্যাকাদেমি! দারুণ এক ছয় মারতে দেখে শচীন তেন্ডুলকর পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন! তারপর কাঙ্গা লিগের গল্প!
, তাই বল!স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল অর্ক, “আরে, মুম্বাইয়ের ছেলে তুই। তোকে বুঝিয়ে বলতে হবে! সমীহ পেতে হলে অমন একটু ছাড়তেই হয়। দ্যাখ না, আজ বিকেলের মধ্যেই খবরটা পৌঁছে যাবে জুপিটারের কাছে। বুকে ধুকপুকুনি শুরু হয়ে যাবে জগদীপ সিংয়ের। আর হাজার হোক, আন্ধেরির মারাঠা অ্যাকাদেমির ছেলে তুই। নামিদামি কোচের কাছে ট্রেনিং নিচ্ছিস। ওসব জগদীপ সিং তোর কাছে তো জলভাত রে!
অর্কর ওই কথার কোনও উত্তর জোগায়নি সমুর মুখে। মারাঠা অ্যাকাদেমির ছেলে হয়েও আগ্রহের অভাবে তেমন কিছুই যে এখনও শিখে উঠতে পারেনি, তাই কি আর মুখ ফুটে বলা যায়! তবুও ভেবে রেখেছিল, দেউলহাটির মতো অখ্যাত জায়গায় ব্যাট হাতে ভালোই টেনে দিতে পারবে। কিন্তু সে আশা মিইয়ে গেল বিকেলের মধ্যেই। এখানে ক্রিকেট নিয়ে যে এত উৎসাহ ভাবতেই পারেনি। অর্কর সঙ্গে মাঠে ছেলেদের প্র্যাকটিসে এসেছিল। খেলা দেখে তো অবাক। দেউলহাটি ছোটো এক টাউন। অথচ ক্রিকেট খেলাটা ভালোই রপ্ত রয়েছে এদের। কয়েকজন তো দুর্দান্ত! অর্কর কাছেই শুনতে পেল, বাসে পৌনে এক ঘন্টার পথ কল্যাণী। ওখানে এক কোচিং সেন্টারে প্রতি রবিবার কলকাতা থেকে দুজন কোচ এসে ছেলেদের খেলা শেখান। দেউলহাটির অনেকেই সেখানে গিয়ে নিয়মিত কোচিং নেয়। জুপিটারের জগদীপ সিংয়ের কথা ভেবে সমুর ধুকপুকুনি এরপর যে আরও বাড়ল, তা বলাই বাহুল্য।
নির্দিষ্ট দিন এসে পড়ল দেখতে দেখতে। অর্কর অনুমানে ভুল হয়নি। ইতিমধ্যে সমুর খবরটা ভালোই ছড়িয়েছে চারদিকে। মুম্বাইয়ে রমাকান্ত আচরেকরের ছাত্র সমুর খেলা দেখতে মাঠে ভিড় হয়েছে দেখবার মতো। চাউর হয়ে গেছে, সমুর দৌলতে এবার জুপিটারকে হারাতে বেগ পেতে হবে না নেতাজী বয়েজের। দেউলহাটির ক্রিকেটপ্রেমী ছেলেবুড়ো তাই ঝেঁটিয়ে চলে এসেছে মাঠে।
টসে জিতে প্রথম ব্যাট নিল নেতাজী বয়েজ। আজ ওদের ক্যাপ্টেন অর্ক। সমুকে ওয়ান ডাউন রাখা হয়েছে। ওপেনিং করতে এল নেতাজী বয়েজের দুই সেরা ব্যাটসম্যান, প্রশান্ত আর রমেন। ওদের দুজনের খেলাই দেখছে সমু। চমৎকার খেলে। বিশেষ করে প্রশান্ত। দারুণ রিফ্লেক্স। হাতে মার আছে। প্র্যাকটিস মাঠে প্রশান্তর খেলা দেখে এই প্রথম ওর মনে হয়েছে, আন্ধেরির মারাঠা অ্যাকাদেমিতে কোচিং নিয়েও ওর ধারেকাছে সে পৌঁছোতে পারেনি। ওদের ওপেনিং করতে দেখে খানিকটা হলেও তাই ভরসা পেল। গোড়ায় দুই ওপেনার যদি কিছু রান করে ফেলতে পারে, পরে অনেকটা নিশ্চিন্তে ব্যাট করতে পারবে।
কিন্তু বিধি বাম। নতুন বলে জুপিটারের ক্যাপ্টেন প্রথম ওভারটাই দিল জগদীপ সিংকে। প্রথম ব্যাট করবে রমেন। ও তৈরি হতেই অনেকটা ছুটে এসে প্রথম বলটা করল জগদীপ। বলে যথেষ্ট জোর থাকলেও শর্ট পিচ। দেখে শুনে ডিফেন্সিভ খেলল রমেন। একটু জোরের উপর। বল কভারের দিকে ছিটকে যেতেই খুব সহজে একটা রান নিয়ে নিল।
প্রশান্ত বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান, তাই ফিল্ডিং বদল হতে কিছু সময় লাগল। এরপর ব্যাটসম্যান প্রস্তুত হতেই দৌড় শুরু করল জগদীপ। পরের বল অবিশ্বাস্য একটা ইয়র্কার। এমন দুর্দান্ত ইয়র্কার ওদের প্র্যাকটিসের মাঠেও বেশি দেখেনি সমু। এমন বলে তেমন কিছু করার থাকে না ব্যাটসম্যানের। প্রশান্তও পারল না। ব্যাট নামাবার আগেই বলটা মিডল স্ট্যাম্প ছিটকে দিয়ে বেরিয়ে গেল।
প্রথম ওভারেই উইকেট। একেবারে বোল্ড। কিন্তু জুপিটারের খেলোয়াড় এবং লাইনের ধারে বসা সমর্থক, কারও মধ্যেই খুব একটা উল্লাস দেখা গেল না। সবার চোখ তখন সাইড লাইনের দিকে। প্রশান্ত ফেরার পথ ধরতেই ব্যাট হাতে ক্রিজের দিকে এগিয়ে আসছে মুম্বাইয়ের সেই ছেলেটা।
চলতে চলতে সমুও দেখতে পেল, সারা মাঠ অসীম আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছে ওর দিকে। অজান্তেই কুঁকড়ে গেল ও। কিন্তু উপায় ছিল না। ক্রিজে এসে দাঁড়াতেই বেলার তার বোলিং মার্কের দিকে এগোতে শুরু করেছে। স্টান্স নিয়ে প্রস্তুত হল সমু।
চমৎকার গুডলেংথ বলটা ছুটে আসছিল মিডল স্ট্যাম্প লক্ষ্য করে। ভিতরে দারুণ উত্তেজনায় সমু ব্যাট তুলে সপাটে ড্রাইভ করল। মারে যথেষ্টই জোর ছিল। ব্যাটে বলে সংযোগ ঘটতেই দারুণ শব্দে প্রায় উড়ে গেল বলটা। মাঠসুদ্ধ মানুষ দেখল, আকাশে লাল একটা গোলা যেন উড়ে চলেছে সূর্যের দিকে। মিউনিসিপ্যালিটির এই মাঠে স্টেডিয়াম তৈরি হবার কথা। তাই বেশ বড়োই বলা যায়। দুর্দান্ত অন ড্রাইভটা মাঠ কাঁপিয়ে গিয়ে পড়ল একেবারে মাঠের বাইরে ব্যস্ত রাস্তার মাঝে। এই মাঠে এত বড়ো ছক্কা কেউ কোনওদিন দেখেছে বলে মনে করতে পারল না। সমুর সেই ছক্কা দেখে নেতাজী বয়েজের ছেলেরা ফেটে পড়ল উচ্ছ্বাসে। হাততালি দিয়ে চিয়ার করল জুপিটারের ছেলেরাও।
এমন মার জগদীপ সিং অনেকদিন খায়নি। জুনিয়র বেঙ্গল থেকে এ-বছরই ডাক পেয়েছে। আঁতে ঘা লাগারই কথা। পরের বলটা তাই বাউন্স করাল। শেষমুহূর্তে নিচু হয়ে বলটা ছেড়ে দিচ্ছিল সমু। কিন্তু পেরে উঠল না। বলটা ওর বাঁ হাতের কনুইয়ের সামান্য উপরে ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল। যন্ত্রণায় আঘাতের জায়গাটা চেপে ও তৎক্ষণাৎ বসে পড়ে পড়ল মাটিতে। জুপিটারের ছেলেরাই ছুটে এল আগে। সাইড লাইন থেকে ছুটে এল নেতাজী বয়েজের ছেলেরাও। বরফ আনতে ছুটল কেউ। আঘাতের জায়গাটা ফুলে উঠল দেখতে দেখতে। দেরি না করে তখনই নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালে।
খেলায় নেতাজী বয়েজ শেষপর্যন্ত জিতে গেল পনেরো রানে। আসলে ওই অঘটনের পর জগদীপ সিং সেভাবে আর বলই করতে পারেনি। কেমন গুম হয়ে গেছে। জুপিটারও তাই আর সুবিধা করতে পারেনি। ওপেনার রমেন একাই করেছে বাহাত্তর। জুপিটারের বিরুদ্ধে এ-বছর ওদের প্রথম জয়। কিন্তু সেজন্য নেতাজী বয়েজের কারও মধ্যেই কোনও উচ্ছ্বাস দেখা গেল না। খেলা শেষ হতেই কিটস গুছিয়ে সবাই ছুটল সমুকে দেখতে। ততক্ষণে খবর এসেছে, সমুর হাড়ে অল্প চিড় ধরেছে। প্লাস্টার করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়িতে।
ঘরে ওদের জন্যই অপেক্ষা করছিল সমু। ওষুধে ব্যথা কমেছে কিছুটা। ইতিমধ্যে নেতাজী বয়েজের জেতার খবরটাও পেয়েছে। ছেলেদের দেখেই চিয়ার করল ও। তাই দেখে পালটা হর্ষধ্বনি উঠল ওদিক থেকে। দুর্দান্ত ওভার বাউন্ডারির জন্য চারদিক থেকে ছুটে এল অভিনন্দনের বন্যা। ওর দারুণ ব্যাটিংটা আজ দেখা হল না বলে আফসোস। তারই ভিতর আবেদন, সেরে উঠে সমু যেন ওদের একটু দেখিয়ে দেয় দুর্দান্ত মারার টেকনিক। আচরেকর স্যারের কিছু টিপস।
ছেলেরা আজ আর সময় নেয়নি। অসুস্থ সমুকে বিশ্রাম দিতে একটু পরেই একে একে বিদায় নিল সবাই। ঘর খালি হতে অর্ক বলল, “এমন দারুণ খেলিস তুই! আর ভয় পাচ্ছিলি!
উত্তরে সমু ম্লান হাসল একটু। আসলে সে তো জানে, ওই ছয় মারার পিছনে তেমন কিছু নেই। হয়ে গেছে হঠাৎ। স্ট্যাম্পের উপর বল ছিল। একটু এদিক ওদিক হলে বোল্ড আউটও হয়ে যেতে পারত। নয়তো ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ। সমু হঠাৎ ঠিক করে ফেলল, ক্রিকেট শিখতেই হবে ওকে। আর চেষ্টা করলে সেটা হয়তো অসাধ্য হবে না। বাবাও খুশি হবেন খুব। অল্প হেসে বলল, “ব্যাড লাক, অর্ক। এবার হল না। সামনের ছুটিতে আবার আসব। সেদিন ক্রিকেটার সমুকে রাখিস কিন্তু টিমে।
ছবি: প্রকাশ গুপ্ত

4 comments:

  1. কী যে দারুন লাগলো, বলে বোঝাতে পারবো না। খুব সুন্দর।

    ReplyDelete